ফেসবুকে সুন্দরী নারীর ছবি দেখে বন্ধুত্ব, পরে হোটেলে…

ফেসবুকে সুন্দরী নারীর ছবি দেখে বন্ধুত্ব, পরে হোটেলে…

ফেসবুকে সুন্দরী নারীর ছবি দেখে বন্ধুত্ব, পরে হোটেলে...
ফেসবুকে সুন্দরী নারীর ছবি দেখে বন্ধুত্ব, পরে হোটেলে...

অনলাইন ডেস্ক: বিত্তশালীদের টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুন্দরী নারীর ছবি ব্যবহার করে বন্ধুত্ব। আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে ডেকে নিয়ে অন্তত ৫০ জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ভোরে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত দুই নারীসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুন্দরী নারীর ছবি ব্যবহার করে প্রথমে বন্ধুত্ব। এরপর আকৃষ্ট করে দেখা করার জন্য ডাকা হতো আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে। সেখানে এলে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে আসছিল একটি চক্র। প্রতারণার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতারের পর এমন দাবি করছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, ফেসবুকে উচ্চবিত্ত ও ধনীদের আইডি টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করত প্রতারক চক্রটি। প্রেমের ফাঁদে ফেলে গত দুই বছরে বাসায় ডেকে প্রায় ৫০ জন ধনাঢ্য ও করপোরেট ব্যক্তির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোমেন বলেন, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে ব্ল্যাকমেইলিং ও পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে চাঁদাবাজির অভিযোগে চক্রের মূলহোতা ও দুই নারীসহ সাতজনকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং দক্ষিণখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী র‍্যাব-১ এ অভিযোগ করেন, গত ২২ জুলাই ভুক্তভোগীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। গত ১০ আগস্ট ভুক্তভোগীকে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া কৌশলে রাজধানীর একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যান। রুমের ভেতরে ঢোকার পর পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রিয়া ও তার সহযোগীরা ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করেন।

‘পরে এসব ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা এবং ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা আদায় করে এই চক্র। লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ওই সময়ের ঘটনাটি একটি স্পর্শকাতর ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভেবে কোথাও কোনো অভিযোগ না করে নীরব থাকেন। কিন্তু এ ঘটনার এক সপ্তাহ পরে আবারও আল মাহমুদ ওরফে মামুন ভুক্তভোগীর কাছে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করেন। দাবি করা ২ লাখ টাকা না দিলে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখান।’

র‌্যাব জানায়, এ সময় ভুক্তভোগী নিরুপায় হয়ে র‍্যাব-১ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করে আইনগত সহায়তা চান। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ভাটারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে র‍্যাব পর্নোগ্রাফি ও চাঁদাবাজ চক্রের মূলহোতাসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোমেন বলেন, গ্রেফতাররা অভিনব প্রতারণা চক্রের সদস্য। এই চক্রের মূলহোতা আল মাহমুদ ওরফে মামুন এবং তার নারী সহযোগী তানিয়া আক্তার ও মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া। এ দুই নারী সদস্যের ছবি ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট কোনো আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে আমন্ত্রণ জানানো হতো।

‘ভুক্তভোগীরা ওই স্থানে গেলেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে অন্য সদস্যরা ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করত। এ কৌশল অবলম্বন করে চক্রটি গত দুই বছরে প্রায় ৫০ জনের বেশি ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। গ্রেফতাররা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আসছিলেন।’

চক্রের ওই দুই নারী সম্পর্কে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোমেন বলেন, তানিয়া আক্তার হচ্ছেন আল মাহমুদ ওরফে মামুনের স্ত্রী। তারা দুজন পরিকল্পিতভাবে এই কাজে নেমেছেন। আর মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

এদিকে ২০০৫ সালে সাভারে যৌতুকের টাকার জন্য সামিনা নামে এক গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি রহিম ও রোকেয়াকে চাঁদপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাবের আরেকটি দল।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানায় র‍্যাব।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply